স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী ॥বরগুনার বেতাগীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের হিসাব রক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে হাসপাতালের কর্মচারীরাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। তিনি পূর্বেও ন্যায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
হাসপাতালের ভুক্তভোগী কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে মো. রফিকুল ইসলাম বেতাগী হাসপাতালের হিসাবরক্ষক কামপ্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন।
কর্মচারীদের প্রতি তার দুর্ব্যবহার, তাদের নামে আসা কাগজপত্র গোপণ করে হয়রানী করা এখন নিত্য নৈমাত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুর রশীদ এসবের প্রতিবাদ করায় তাকে বাবুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে বদলী করা হয়।
সূত্র মতে রফিকুল ইসলামের বাড়ি বেতাগী উপজেলায় হওয়ায় স্থানীয় লোক হওয়ার কারনে এসব দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ পান বলে জানান কর্মচারীরা। এনসিডি প্রশিক্ষন ও কমিউনিটি ক্লিনিকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত মাতৃদুগ্ধ দিবসের টাকা আত্মসাতের কারনে ২০১৭ সালে প্রশাসনিকভাবে তাকে বদলী করা হয় ভোলা জেলায়। কিন্ত আদালতের আশ্রয় নিয়ে ৬ মাসের জন্য বদলী স্থগিত করে এখনো বহাল তবিয়াতে রয়েছেন এ উপজেলায়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগদান ও বদলির ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য তাকে উৎকোচ দিতে হয় । নানা অজুহাত দেখিয়ে কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতিমাসে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিনোদনের ছুটি মঞ্জুর ও অর্থছাড় করাতে তাকে বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেকটাই দিতে হয়। এভাবে কর্মচারীরা নির্যাতিত হয়ে আসলেও তারা ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
এছাড়া হাসপাতালের সরকারি কোয়াটার দ্বিতীয় শ্রেণির লোক তৃতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণির লোক চতুর্থ শ্রেণির এভাবে বিভিন্ন কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে মাসোহারা হিসেবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতি জুন মাসে অফিসের আনুসঙ্গিক খরচের ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে ও হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে ঠিকমতো কাজ না করে টাকা আত্মসাত করারও অভিযোগ করেছেন ওই সব ভুক্তভোগী কর্মচারীরা। ইমাজেন্সী সহাকারী মো. জাহিদ হোসেনের কাছ থেকে হাসপাতালের অফিস কক্ষ ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা আদায় করলেও সরকারি খাতে তা জমা না দিয়ে নিজে পকেটস্থ করছেন। হাসপাতালের অফিস সহায়ক মো. শহীদুল ইসলাম চলতি সালের ফ্রেরুয়ারি মাসে যোগদানের পর থেকে হিসাব রক্ষককে ম্যানেজ করে মাসে ২ থেকে ৩ দিন অফিস করে যথারীতি পুরো মাসের বেতন তুলছেন। একই অভিযোগ প্রধান সহকারী আসাদুজ্জামান নাসিরের বিরুদ্ধেও।
গত ৭ এপ্রিল স্বাস্থ দিবস‘২০১৯ পালন না করে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে টাকা উত্তোলন, কর্মচারীদের বিভিন্ন দিবস পালন না করে কৌশলে চিঠি গোপন করে প্রশিক্ষনে নাম অন্তভুক্তকরণে টাকা আদায়, ২০১৭ সালে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল কল্যান সহায়তা ফান্ড ফুলের বাগান করার জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দের সেখানে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে নামে মাত্র বাগান করে বাকী টাকা আত্মসাত করে। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক বলে জানান তারা।
এসব বিষয়ে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের নিকট ২০১৮ সালে বেশকিছু কর্মচারি লিখিত অভিযোগ করে। এ প্রেক্ষিতে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাকেরগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামানকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে এর সত্যতা পেয়ে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শৃঙ্খলা শাখায় প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আর সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোরমুখ দেখেনি। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মো. রফিকুল ইসলাম জানান,‘ আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়, এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্পনা কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শাকিল তানভীর জানান,‘ হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে অবশ্যই বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানান।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply